দুর্গা পুজো বাংলার অন্যতম প্রধান উৎসব। এটি কেবল উৎসব নয়, বরং শক্তি ও সাহসের প্রতীক। প্রতিটি বছর দেবী দুর্গার আগমন এবং প্রস্থানের বাহন নির্ধারণ করা হয়, যা এক একটি আলাদা ফলাফল বয়ে আনে। ২০২৪ সালে, মা দুর্গার আগমন দোলায় (পালকিতে) এবং গমন গজে (হাতিতে) হতে চলেছে, যা নিয়ে ইতিমধ্যেই অনেক আলোচনা শুরু হয়েছে।
দুর্গা পুজো ২০২৪ বাহন
দেবীর আগমন ও গমন: পঞ্জিকা অনুযায়ী নিয়ম
পঞ্জিকা অনুসারে, পুজোর সপ্তমীতে দেবীর আগমন এবং দশমীতে গমন হয়ে থাকে। দেবীর আসা এবং যাওয়ার বাহন নির্ধারণ হয় সপ্তমী এবং দশমীর দিনগুলো সপ্তাহের কোন বার পড়ছে তার ওপর ভিত্তি করে।
শাস্ত্রমতে,
- যদি সপ্তমী রবি বা সোমবার পড়ে, তবে দেবীর বাহন হবে গজ বা হাতি।
- যদি সপ্তমী শনিবার বা মঙ্গলবার পড়ে, তাহলে দেবীর বাহন হবে ঘোটক বা ঘোড়া।
- যদি সপ্তমী বৃহস্পতিবার বা শুক্রবার পড়ে, তাহলে দেবীর বাহন হবে দোলা বা পালকি।
- যদি সপ্তমী বুধবার পড়ে, তবে দেবীর বাহন হবে নৌকা।
একইভাবে, দশমীর দিনও গুরুত্বপূর্ণ:
- যদি দশমী রবি বা সোমবার হয়, তবে দেবীর গমন হবে গজে বা হাতিতে।
- যদি দশমী শনিবার বা মঙ্গলবার হয়, তবে দেবী বিদায় নেবেন ঘোড়ায়।
- যদি দশমী বৃহস্পতিবার বা শুক্রবার হয়, তাহলে দেবীর গমন হবে দোলায় বা পালকিতে।
- আর যদি দশমী বুধবার হয়, তবে দেবী নৌকায় করে কৈলাশে ফিরবেন।
এইভাবে দেবীর আগমন ও গমন বাহনের পরিবর্তনের সাথে ভিন্ন ভিন্ন ফলাফলের ইঙ্গিত দেয়, যা মানুষের জীবনের বিভিন্ন দিককে প্রভাবিত করে।
মা দুর্গার আগমন ও গমন: ২০২৪ সালের বিশেষত্ব
এই বছর মহালয়া ২ অক্টোবর, এবং দুর্গা পুজোর সপ্তমী ১০ অক্টোবর বৃহস্পতিবারে পড়েছে। ফলে, শাস্ত্রমতে দেবী দুর্গার আগমন হবে দোলায়। বিজয়া দশমী ১৩ অক্টোবর রবিবারে, তাই মা দুর্গার গমন হবে হাতিতে।
শাস্ত্র অনুসারে, যদি দেবী পালকিতে করে আসেন, তবে এটি কোনও শুভ ইঙ্গিত বহন করে না। “দোলায়াং মকরং ভবেৎ” অর্থাৎ এই আগমনে মহামারী, ভূমিকম্প, খরা, যুদ্ধ এবং মৃত্যুর আশঙ্কা থাকে। কিন্তু এই বছর দেবীর গমন হাতিতে হবে, যা সর্বোত্তম বলে বিবেচিত। শাস্ত্র অনুযায়ী, দেবী যদি হাতিতে বিদায় নেন, তবে পৃথিবীতে সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধি বজায় থাকে। এই বাহনে দেবী ফিরলে মর্ত্যলোকের মানুষদের মনোবাঞ্ছা পূর্ণ হয় এবং প্রয়োজনমতো বৃষ্টি হয়।
বাহনের মাধ্যমে দেবীর বার্তা
প্রতি বছর দুর্গা পুজোর সময় দেবীর আগমন ও গমন দুটি ভিন্ন বাহনে হয়ে থাকে, যা ভিন্ন ভিন্ন ফলাফল বয়ে আনে।
- দোলায় আগমন: দেবী যখন পালকিতে আগমন করেন, তখন পৃথিবীতে মহামারী, যুদ্ধ এবং প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
- হাতিতে গমন: গজে গমন শুভ বলে ধরা হয়, এটি সমৃদ্ধি এবং শস্য উৎপাদনের প্রতীক। সমাজে সুখ-শান্তি বিরাজ করে এবং প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় থাকে।
অন্য বাহনের ফলাফল
- ঘোড়ায় আগমন বা গমন: যদি দেবী ঘোড়ায় আগমন বা গমন করেন, তবে “ছত্র ভঙ্গ স্তুরঙ্গমে” অর্থাৎ সমাজে রাজনৈতিক ও সামরিক অস্থিরতা বৃদ্ধি পায়। রাজায়-রাজায় বা রাষ্ট্রে-রাষ্ট্রে যুদ্ধের সম্ভাবনা থাকে।
- নৌকায় আগমন বা গমন: যদি দেবী নৌকায় করে আসেন বা যান, তবে এটি শস্যের উৎপাদন এবং মনোকামনা পূর্ণ হওয়ার প্রতীক। তবে অতি বর্ষণ বা প্লাবনের আশঙ্কাও থেকে যায়।
নতুন দিক: পরিবেশের উপর প্রভাব
প্রতি বছরের মতো এই বছরও দেবীর বাহন নিয়ে ভাবনা রয়েছে, কিন্তু এর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে পরিবেশের অবস্থা। যেমন, হাতিতে গমন সমাজের সুখ-শান্তি ও ভারসাম্যের প্রতীক, কিন্তু তা প্রকৃতির উপরে নির্ভরশীল। অতিরিক্ত বৃষ্টি বা খরা, এই দুইয়ের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা আজকের সময়ে খুব গুরুত্বপূর্ণ। তাই দেবীর বাহন কেবল পুরাণের প্রতীক নয়, এটি পরিবেশের জন্যও এক গুরুত্বপূর্ণ বার্তা।